ফির‘আওন বংশের এক ব্যক্তি, যে মু’মিন ছিল এবং নিজ ঈমান গোপন রাখিত, বলিল, ‘তোমরা কি এক ব্যক্তিকে এইজন্য হত্যা করিবে যে, সে বলে, ‘আমার প্রতিপালক আল্লাহ্,’ অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে সু্স্পষ্ট প্রামাণসহ তোমাদের নিকট আসিয়াছে? সে মিথ্যাবাদী হইলে তাহার মিথ্যাবাদিতার জন্য সে দায়ী হইবে, আর যদি সে সত্যবাদী হয়, সে তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলে, তাহার কিছু তো তোমাদের উপর আপতিত হইবেই।’ নিশ্চয় আল্লাহ্ সীমালংঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (৪০:২৮)
‘হে আমার সম্প্রদায়! আজ কর্তৃত্ব তোমাদের, দেশে তোমরাই প্রবল; কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহ্র শাস্তি আসিয়া পড়িলে কে আমাদেরকে সাহায্য করিবে?’ ফির‘আওন বলিল, ‘আমি যাহা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাহাই বলিতেছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই দেখাইয়া থাকি। (৪০:২৯)
মু’মিন ব্যক্তিটি বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ দুর্দিনের আশংকা করি- (৪০:৩০)
‘যেমন ঘটিয়াছিল নূহ্, ‘আদ, সামূদ এবং তাহাদের পূর্ববর্তীদের ব্যাপারে। আল্লাহ্ তো বান্দাদের প্রতি কোন জুলুম করিতে চান না। (৪০:৩১)
‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য আংশকা করি আর্তনাদ দিবসের, (৪০:৩২)
‘যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরিয়া পলায়ন করিতে চাহিবে। আল্লাহ্র শাস্তি হইতে তোমাদেরকে রক্ষা করিবার কেহ থাকিবে না। আল্লাহ্ যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন তাহার জন্য কোন পথপ্রদর্শক নাই।’ (৪০:৩৩)
পূর্বেও তোমাদের নিকট ইউসুফ আসিয়াছিল স্পষ্ট নিদর্শনসহ; কিন্তু সে তোমাদের নিকট যাহা লইয়া আসিয়াছিল তোমরা তাহাতে বারবার সন্দেহ পোষণ করিতে। পরিশেষে যখন ইউসুফের মৃত্যু হইল তখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘তাহার পরে আল্লাহ্ আর কোন রাসূল প্রেরণ করিবেন না।’ এইভাবে আল্লাহ্ বিভ্রান্ত করেন সীমালংঘনকারী ও সংশয়বাদীদেরকে- (৪০:৩৪)
যাহারা নিজেদের নিকট কোন দলীল-প্রমাণ না থাকিলেও আল্লাহ্র নিদর্শন সম্পর্কে বিতন্ডায় লিপ্ত হয়, তাহাদের এই কর্ম আল্লাহ্ এবং মু’মিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার্হ। এইভাবে আল্লাহ্ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়কে মোহর করিয়া দেন। (৪০:৩৫)
ফির‘আওন বলিল, ‘হে হামান! আমার জন্য তুমি নির্মাণ কর এক সুউচ্চ প্রাসাদ যাহাতে আমি পাই অবলম্বন- (৪০:৩৬)
‘অবলম্বন আসমানে আরোহণের, যেন দেখিতে পাই মূসার ইলাহ্কে; তবে আমি তো উহাকে মিথ্যাবাদীই মনে করি।’ এইভাবে ফির‘আওনের নিকট শোভনীয় করা হইয়াছিল তাহার মন্দ কর্মকে এবং তাহাকে নিবৃত্ত করা হইয়াছিল সরল পথ হইতে এবং ফির‘আওনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হইয়াছিল সম্পূর্ণরূপে। (৪০:৩৭)
মু’মিন ব্যক্তিটি বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করিব। (৪০:৩৮)
‘হে আমার সম্প্রদায়! এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হইতেছে চিরস্থায়ী আবাস। (৪০:৩৯)
‘কেহ মন্দ কর্ম করিলে সে কেবল তাহার কর্মের অনুরূপ শাস্তি পাইবে এবং পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যাহারা মু’মিন হইয়া সৎকর্ম করে তাহারা দাখিল হইবে জান্নাতে, সেখানে তাহাদেরকে দেওয়া হইবে অপরিমিত জীবনোপকরণ। (৪০:৪০)
‘হে আমার সম্প্রদায়! কী আশ্চর্য! আমি তোমাদেরকে আহ্বান করিতেছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে ডাকিতেছ অগ্নির দিকে! (৪০:৪১)
‘তোমরা আমাকে বলিতেছ আল্লাহ্কে অস্বীকার করিত এবং তাঁহার সমকক্ষ দাঁড় করাইতে, যাহার সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নাই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহ্বান করিতেছি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল আল্লাহ্র দিকে। (৪০:৪২)
নিঃসন্দেহে তোমরা আমাকে আহ্বান করিতেছ এমন একজনের দিকে যে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও আহ্বানযোগ্য নয়। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহ্র নিকট এবং সীমালংঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। (৪০:৪৩)
‘আমি তোমাদেরকে যাহা বলিতেছি, তোমরা তাহা অচিরেই স্মরণ করিবে এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহ্তে অর্পণ করিতেছি; আল্লাহ্ তাঁহার বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।’ (৪০:৪৪)
অতঃপর আল্লাহ্র তাহাকে উহাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হইতে রক্ষা করিলেন এবং কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করিল ফির‘আওন সম্প্রদায়কে। (৪০:৪৫)