স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করিল, আমি বলিলাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে উহা হইতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হইল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান চিনিয়া লইল। বলিলাম, “আল্লাহ্-প্রদত্ত জীবিকা হইতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতিকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করিয়া বেড়াইও না।’ (২:৬০)
এবং নিশ্চয় আমি মূসাকে কিতাব দিয়াছি এবং তাহার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলগণকে প্রেরণ করিয়াছি, মার্ইয়ান-তনয় ‘ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়াছি এবং ‘পবিত্র আত্মা’ দ্বারা তাহাকে শক্তিশালী করিয়াছি। তবে কি যখনই কোন রাসূল তোমাদের নিকট এমন কিছু আনিয়াছে যাহা তোমাদের মনঃপূত নয় তখনই তোমরা অহংকার করিয়াছ আর কতককে অস্বীকার করিয়াছ এবং কতককে হত্যা করিয়াছ? (২:৮৭)
এবং নিশ্চয় মূসা তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছে, তাহার পরে তোমরা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে। আর তোমরা তো জালিম। (২:৯২)
অনেক রাসূল প্রেরণ করিয়াছি যাহাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বলিয়াছি এবং অনেক রাসূল, যাহাদের কথা তোমাকে বলি নাই। এবং মূসার সঙ্গে আল্লাহ্ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করিয়াছিলেন। (৪:১৬৪)
তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! তাহারা যত দিন সেখানে থাকিবে তত দিন আমরা সেখানে প্রবেশ করিবই না; সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসিয়া থাকিব।’ (৫:২৪)
সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কাহারও উপর আমার আধিপত্য নাই; সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দাও।’ (৫:২৫)
আল্লাহ্ বলিলেন, ‘তবে ইহা চল্লিশ বৎসর তাহাদের জন্য নিষিদ্ধ রহিল, তাহারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্ত হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে, সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করিও না।’ (৫:২৬)
তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহর পারিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর। (৭:১০৩)
মূসা বলিলম, ‘হে ফির‘আওন! আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত। (৭:১০৪)
‘ইহা স্থির নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলিব না। তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে স্পষ্ট প্রমাণ আমি তোমাদের নিকট আনিয়াছি, সুতরাং বনী ইসরাঈলকে তুমি আমার সঙ্গে যাইতে দাও।’ (৭:১০৫)
ফির‘আওন বলিল, ‘যদি তুমি কোন নিদর্শন আনিয়া থাক তবে তুমি সত্যবাদী হইলে তাহা পেশ কর।’ (৭:১০৬)
অতঃপর মূসা তাহার লাঠি নিক্ষেপ করিল এবং তৎক্ষণাৎ উহা এক সাক্ষাৎ অজগর হইল। (৭:১০৭)
এবং সে তাহার হাত বাহির করিল আর তৎক্ষণাৎ উহা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল প্রতিভাত হইল। (৭:১০৮)
ফির‘আওন-সম্প্রদায়ের প্রধানরা বলিল, ‘এ তো একজন সুদক্ষ জাদুকর, (৭:১০৯)
‘এ তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হইতে বহিষ্কার করিতে চায়, এখন তোমরা কী পরামর্শ দাও?’ (৭:১১০)
তাহারা বলিল, ‘তাহাকে ও তাহার ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সংগ্রাহকদেরকে পাঠাও, (৭:১১১)
‘যেন তাহারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।’ (৭:১১২)
জাদুকরেরা ফির‘আওনের নিকট আসিয়া বলিল, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকিবে তো?’ (৭:১১৩)
সে বলিল, ‘হ্যাঁ এবং তোমরা অবশ্যই আমার সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ (৭:১১৪)
তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! তুমিই কি নিক্ষেপ করিবে, না আমরাই নিক্ষেপ করিব?’ (৭:১১৫)
সে বলিল, ‘তোমরাই নিক্ষেপ কর’। যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল তখন তাহারা লোকের চোখে জাদু করিল, তাহাদেরকে আতংকিত করিল এবং তাহারা এক বড় রকমের জাদু দেখাইল। (৭:১১৬)
আমি মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করিলাম, ‘তুমিও তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ সহসা উহা তাহাদের অলীক সৃষ্টিগুলিকে গ্রাস করিতে লাগিল; (৭:১১৭)
ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হইল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল তাহা মিথ্যা প্রতিপন্ন হইল। (৭:১১৮)
সেখানে তাহারা পরাভূত হইল ও লাঞ্ছিত হইল, (৭:১১৯)
এবং জাদুকরেরা সিজ্দাবনত হইল। (৭:১২০)
তাহারা বলিল, ‘আমরা ঈমান আনিলাম জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি (৭:১২১)
‘যিনি মূসা ও হারূনেরও প্রতিপালক।’ (৭:১২২)
স্মরণ কর, মূসার জন্য আমি ত্রিশ রাত্রি নির্ধারণ করি এবং আরও দশ দ্বারা উহা পূর্ণ করি। এইভাবে তাহার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। এবং মূসা তাহার ভ্রাতা হারূনকে বলিল, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করিবে, সংশোধন করিবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করিবে না।’ (৭:১৪২)
মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হইল এবং তাহার প্রতিপালক তাহার সঙ্গে কথা বলিলেন তখন সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখিব।’ তিনি বলিলেন, ‘তুমি আমাকে কখনই দেখিতে পাইবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, উহা স্বস্থানে স্থির থাকিলে তবে তুমি আমাকে দেখিবে।’ যখন তাহার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করিলেন তখন উহা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িল। যখন সে জ্ঞান ফিরিয়া পাইল তখন বলিল, ‘মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হইয়া তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করিলাম এবং মু’মিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।’ (৭:১৪৩)
তিনি বলিলেন, ‘হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে বিশিষ্ট করিয়াছি; সুতরাং আমি যাহা দিলাম তাহা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ হও।’ (৭:১৪৪)
পরে আমার নিদর্শনসহ মূসা ও হারূনকে ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু উহারা অহংকার করে এবং উহারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়। (১০:৭৫)
অতঃপর যখন উহাদের নিকট আমার নিকট হইতে সত্য আসিল তখন উহারা বলিল, ‘ইহা তো নিশ্চয়ই স্পষ্ট জাদু।’ (১০:৭৬)
মূসা বলিল, ‘সত্য যখন তোমাদের নিকট আসিল তখন তৎসম্পর্কে তোমরা এইরূপ বলিতেছ? ইহা কি জাদু? জাদুকরেরা তো সফলকাম হয় না।’ (১০:৭৭)
উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে যাহাতে পাইয়াছি তুমি কি তাহা হইতে আমাদেরকে বিচ্যুত করিবার জন্য আমাদের নিকট আসিয়াছ এবং যাহাতে দেশে তোমাদের দুইজনের প্রতিপত্তি হয়, এইজন্য? আমরা তোমাদের প্রতি বিশ্বাসী নই।’ (১০:৭৮)
ফির‘আওন বলিল, ‘তোমরা আামার নিকট সকল সুদক্ষ জাদুকরকে লইয়া আস।’ (১০:৭৯)
অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসিল তখন উহাদেরকে মূসা বলিল, ‘তোমাদের যাহা নিক্ষেপ করিবার, নিক্ষেপ কর।’ (১০:৮০)
অতঃপর যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল তখন মূসা বলিল, ‘তোমরা যাহা আনিয়াছ তাহা জাদু, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উহাকে অসার করিয়া দিবেন। আল্লাহ্ অবশ্যই অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্ম সার্থক করেন না।’ (১০:৮১)
অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করিলেও আল্লাহ্ তাঁহার বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করিবেন। (১০:৮২)
ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গ নির্যাতন করিবে এই আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের একদল ব্যতীত আর কেহ তাহার প্রতি ঈমান আনে নাই। বস্তুত ফির‘আওন ছিল দেশে পরাক্রমশালী এবং সে অবশ্যই সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (১০:৮৩)
মূসা বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহ্তে ঈমান আনিয়া থাক, যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও তবে তোমরা তাঁহারই উপর নির্ভর কর।’ (১০:৮৪)
অতঃপর তাহারা বলিল, ‘আমরা আল্লাহ্র উপর নির্ভর করিলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করিও না; (১০:৮৫)
‘এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হইতে রক্ষা কর।’ (১০:৮৬)
আমি মূসা ও তাহার ভ্রাতাকে প্রত্যাদেশ করিলাম, ‘মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন কর এবং তোমাদের গৃহগুলিকে ‘ইবাদতগৃহ কর, সালাত কায়েম কর এবং মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।’ (১০:৮৭)
মূসা বলিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ যদ্দ্বারা, হে আমাদের প্রতিপালক! উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক! উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করিয়া দাও, উহারা তো মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।’ (১০:৮৮)
তিনি বলিলেন, ‘তোমাদের দুইজনের দু‘আ কবূল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করিও না।’ (১০:৮৯)
আমি তো মূসাকে আমার নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠাইয়াছিলাম, (১১:৯৬)
আমি মূসাকে কিতাব দিয়াছিলাম ও উহাকে করিয়াছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্য পথনির্দেশক। আমি আদেশ করিয়াছিলাম ‘তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাহাকেও কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ করিও না; (১৭:২)
স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সঙ্গীকে বলিয়াছিল, ‘দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে না পোঁছিয়া আমি থামিব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরিয়া চলিতে থাকিব।’ (১৮:৬০)
উহারা উভয়ে যখন দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে পোঁছিল উহারা নিজেদের মৎস্যের কথা ভুলিয়া গেল; উহা সুড়ংগের মত নিজের পথ করিয়া সমুদ্রে নামিয়া গেল। (১৮:৬১)
যখন উহারা আরো অগ্রসর হইল মূসা তাহার সঙ্গীকে বলিল, ‘আমাদের প্রাতঃরাশ আন, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছি।’ (১৮:৬২)
সে বলিল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করিতেছিলাম তখন আমি মৎস্যের কথা ভুলিয়া গিয়াছিলাম? শয়তানই উহার কথা বলিতে আমাকে ভুলাইয়া দিয়াছিল; মৎস্যটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করিয়া নামিয়া গেল সমুদ্রে।’ (১৮:৬৩)
মূসা বলিল, ‘আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করিতেছিলাম।’ অতঃপর উহারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরিয়া ফিরিয়া চলিল। (১৮:৬৩)
অতঃপর উহারা সাক্ষাৎ পাইল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাহাকে আমি আমার নিকট হইতে অনুগ্রহ দান করিয়াছিলাম ও আমার নিকট হইতে শিক্ষা দিয়াছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। (১৮:৬৫)
মূসা তাহাকে বলিল, ‘সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হইয়াছে তাহা হইতে আমাকে শিক্ষা দিবেন, এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করিব কি? (১৮:৬৬)
সে বলিল, ‘আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করিয়া থাকিতে পারিবেন না, (১৮:৬৭)
‘যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নহে সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করিবেন কেমন করিয়া?’ (১৮:৬৮)
মূসা বলিল, ‘আল্লাহ্ চাহিলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাইবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করিব না।’ (১৮:৬৯)
সে বলিল, ‘আচ্ছা, আপনি যদি আমার অনুসরণ করিবেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করিবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি।’ (১৮:৭০)
অতঃপর উভয়ে চলিতে লাগিল, পরে যখন উহারা নৌকায় আরোহণ করিল তখন সে উহা বিদীর্ণ করিয়া দিল। মূসা বলিল, ‘আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করিয়া দিবার জন্য উহা বিদীর্ণ করিলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করিলেন।’ (১৮:৭১)
সে বলিল, ‘আমি কি বলি নাই যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করিতে পারিবেন না?’ (১৮:৭২)
মূসা বলিল, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করিবেন না ও আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করিবেন না।’ (১৮:৭৩)
অতঃপর উভয়ে চলিতে লাগিল, চলিতে চলিতে উহাদের সঙ্গে এক বালকের সাক্ষাৎ হইলে সে উহাকে হত্যা করিল। তখন মূসা বলিল, ‘আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করিলেন। (১৮:৭৪)
সে বলিল, ‘আমি কি আপনাকে বলি নাই যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করিতে পারিবেন না? (১৮:৭৫)
মূসা বলিল, ‘ইহার পর, যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখিবেন না; আমার ‘ওযর-আপত্তির চূড়ান্ত হইয়াছে। (১৮:৭৬)
অতঃপর উভয়ে চলিতে লাগিল; চলিতে চলিতে উহারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছিয়া তাহাদের নিকট খাদ্য চাহিল; কিন্তু তাহারা তাহাদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। অতঃপর সেখানে তাহারা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখিতে পাইল এবং সে উহাকে সুদৃঢ় করিয়া দিল। মূসা বলিল, ‘আপনি তো ইচ্ছা করিলে ইহার জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করিতে পারিতেন।’ (১৮:৭৭)
সে বলিল, ‘এইখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হইল, যে বিষয় আপনি ধৈর্য ধারণ করিতে পারেন নাই আমি তাহার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিতেছি। (১৮:৭৮)
‘নৌকাটির ব্যাপার-ইহা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, উহারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করিত; আমি, ইচ্ছা করিলাম নৌকাটিকে ক্রুটিযুক্ত করিতে; কারণ উহাদের পশ্চাতে ছিল এক রাজা, যে বলপ্রয়োগে নৌকাসকল ছিনাইয়া লইত। (১৮:৭৯)
‘আর কিশোরটি, তাহার পিতামাতা ছিল মু’মিন। আমি আশংকা করিলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা উহাদেরকে বিব্রত করিবে। (১৮:৮০)
‘অতঃপর আমি চাহিলাম যে, উহাদের প্রতিপালক যেন উহাদেরকে উহার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হইবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি-ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর। (১৮:৮১)
‘আর ঐ প্রাচীরটি, ইহা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, ইহার নিম্নদেশে আছে উহাদের গুপ্তধন এবং উহাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হইয়া ইচ্ছা করিলেন যে, উহারা বয়ঃপ্রাপ্ত হউক এবং উহারা উহাদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক। আমি নিজ হইতে কিছু করি নাই; আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণে অপারগ হইয়াছিলেন, ইহাই তাহার ব্যাখ্যা।’ (১৮:৮২)
স্মরণ কর, এই কিতাবে মূসার কথা, সে ছিল বিশেষ মনোনীত এবং সে ছিল রাসূল, নবী। (১৯:৫১)
তাহাকে আমি আহ্বান করিয়াছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হইতে এবং আমি অন্তরঙ্গ আলাপে তাহাকে নৈকট্য দান করিয়াছিলাম। (১৯:৫২)
আমি নিজ অনুগ্রহে তাহাকে দিলাম তাহার ভ্রাতা হারূনকে নবীরূপে। (১৯:৫৩)
মূসার বৃত্তান্ত তোমার নিকট পৌঁছিয়াছে কি? (২০:৯)
সে যখন আগুন দেখিল তখন তাহার পরিবারবর্গকে বলিল, ‘তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখিয়াছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য উহা হইতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনিতে পারিব অথবা আমি আগুনের নিকটে কোন পথনির্দেশ পাইব।’ (২০:১০)
অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট আসিল তখন আহ্বান করিয়া বলা হইল, ‘হে মূসা! (২০:১১)
আমিই তোমার প্রতিপালক, অতএব তোমার পাদুকা খুলিয়া ফেল, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রহিয়াছ। (২০:১২)
‘এবং আমি তোমাকে মনোনীত করিয়াছি। অতএব যাহা ওহী প্রেরণ করা হইতেছে তুমি তাহা মনোযোগের সঙ্গে শ্রবণ কর। (২০:১৩)
‘আমিই আল্লাহ্, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। অতএব আমার ‘ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। (২০:১৪)
‘কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, আমি ইহা গোপন রাখিতে চাহি যাহাতে প্রত্যেকেই নিজ কর্মানুযায়ী ফল লাভ করিতে পারে। (২০:১৫)
‘সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস করে না ও নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে উহাতে বিশ্বাস স্থাপনে নিবৃত্ত না করে, নিবৃত্ত হইলে তুমি ধ্বংস হইয়া যাইবে। (২০:১৬)
‘হে মূসা! তোমার দক্ষিণ হস্তে উহা কী?’ (২০:১৭)
সে বলিল, ‘উহা আমার লাঠি; আমি ইহাতে ভর দেই এবং ইহা দ্বারা আঘাত করিয়া আমি আমার মেষপালের জন্য বৃক্ষপত্র ফেলিয়া থাকি এবং ইহা আমার অন্যান্য কাজেও লাগে।’ (২০:১৮)
আল্লাহ্ বলিলেন, ‘হে মূসা! তুমি ইহা নিক্ষেপ কর।’ (২০:১৯)
অতঃপর সে উহা নিক্ষেপ করিল, সঙ্গে সঙ্গে উহা সাপ হইয়া ছুটিতে লাগিল, (২০:২০)
তিনি বলিলেন, ‘তুমি ইহাকে ধর, ভয় করিও না, আমি ইহাকে ইহার পূর্বরূপে ফিরাইয়া দিব। (২০:২১)
‘এবং তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে নির্মল উজ্জ্বল হইয়া অপর এক নিদর্শনস্বরূপ। (২০:২২)
‘ইহা এইজন্য যে, আমি তোমাকে দেখাইব আমার মহানিদর্শনগুলির কিছু। (২০:২৩)
‘ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করিয়াছে।’ (২০:২৪)
মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করিয়া দাও। (২০:২৫)
এবং আমার কর্ম সহজ করিয়া দাও। (২০:২৬)
আমার জিহ্বার জড়তা দূর করিয়া দাও- (২০:২৭)
যাহাতে উহারা আমার কথা বুঝিতে পারে। (২০:২৮)
আমার জন্য করিয়া দাও একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হইতে; (২০:২৯)
আমার ভ্রাতা হারূনকে; (২০:৩০)
তাহার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় কর, (২০:৩১)
ও তাহাকে আমার কর্মে অংশী কর, (২০:৩২)
যাহাতে আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিতে পারি প্রচুর; (২০:৩৩)
এবং তোমাকে স্মরণ করিতে পারি অধিক। (২০:৩৪)
‘তুমি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’ (২০:৩৫)
তিনি বলিলেন, হে মূসা! তুমি যাহা চাহিয়াছ তাহা তোমাকে দেওয়া হইল। (২০:৩৬)
এবং আমি তো তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করিয়াছিলাম; (২০:৩৭)
যখন আমি তোমার মাতাকে জানাইয়াছিলাম যাহা ছিল জানাইবার, (২০:৩৮)
‘যে, তুমি তাহাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, অতঃপর উহা দরিয়ায় ভাসাইয়া দাও যাহাতে দরিয়া উহাকে তীরে ঠেলিয়া দেয়, উহাকে আমার শত্রু ও উহার শত্রু লইয়া যাইবে। আমি আমার নিকট হইতে তোমার উপর ভালবাসা ঢালিয়া দিয়াছিলাম, যাহাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’ (২০:৩৯)
‘যখন তোমার ভগ্নী আসিয়া বলিল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিয়া দিব কে এই শিশুর ভার লইবে?’ তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরাইয়া দিলাম যাহাতে তাহার চক্ষু জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হইতে মুক্তি দেই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করিয়াছি। অতঃপর তুমি কয়েক বৎসর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে, হে মূসা! ইহার পরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হইলে। (২০:৪০)
‘এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করিয়া লইয়াছি। (২০:৪১)
‘তুমি ও তোমার ভ্রাতা আমার নিদর্শনসহ যাত্রা কর এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করিও না, (২০:৪২)
‘তোমরা উভয়ে ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমা-লংঘন করিয়াছে। (২০:৪৩)
‘তোমরা তাহার সঙ্গে নম্র কথা বলিবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করিবে অথবা ভয় করিবে।’ (২০:৪৪)
তাহারা বলিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো আশংকা করি সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করিবে অথবা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করিবে।’ (২০:৪৫)
তিনি বলিলেন, ‘তোমরা ভয় করিও না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি।’ (২০:৪৬)
সুতরাং তোমরা তাহার নিকট যাও এবং বল, ‘আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসূল, সুতরাং আমাদের সঙ্গে বনী ইস্রাঈলকে যাইতে দাও এবং তাহাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তেমার নিকট আনিয়াছি তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে নিদর্শন এবং শান্তি তাহাদের প্রতি যাহারা অনুসরণ করে সৎপথ। (২০:৪৭)
‘আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হইয়াছে যে, শাস্তি তো তাহার জন্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরাইয়া নেয়।’ (২০:৪৮)
ফির‘আওন বলিল, ‘হে মূসা! কে তোমাদের প্রতিপালক?’ (২০:৪৯)
মূসা বলিল, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তাহার আকৃতি দান করিয়াছেন, অতঃপর পথনির্দেশ করিয়াছেন।’ (২০:৫০)
ফির‘আওন বলিল, ‘তাহা হইলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী?’ (২০:৫১)
মূসা বলিল, ‘ইহার জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট কিতাবে রহিয়াছে, আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না।’ (২০:৫২)
‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করিয়াছেন বিছানা এবং উহাতে করিয়া দিয়াছেন তোমাদের চলিবার পথ, তিনি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন।’ এবং আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। (২০:৫৩)
তোমরা আহার কর ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য। (২০:৫৪)
আমি মৃত্তিকা হইতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি, উহাতেই তোমাদেরকে ফিরাইয়া দিব এবং উহা হইতে পুনর্বার তোমাদেরকে বাহির করিব। (২০:৫৫)
আমি তো তাহাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখাইয়াছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করিয়াছে ও অমান্য করিয়াছে। (২০:৫৬)
সে বলিল, ‘হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট আসিয়াছ তোমার জাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ হইতে বহিষ্কার করিয়া দিবার জন্য? (২০:৫৭)
‘আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করিব ইহার অনুরূপ জাদু, সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এক মধ্যবর্তী স্থানে, যাহার ব্যতিক্রম আমরাও করিব না এবং তুমিও করিবে না।’ (২০:৫৮)
মূসা বলিল, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেই দিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হইবে।’ (২০:৫৯)
অতঃপর ফির‘আওন উঠিয়া গেল এবং পরে তাহার কৌশলসমূহ একত্র করিল, অতঃপর আসিল। (২০:৬০)
মূসা উহাদেরকে বলিল, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করিও না। করিলে, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করিবেন। যে মিথ্যা উদ্ভাবন করিয়াছে সে-ই ব্যর্থ হইয়াছে।’ (২০:৬১)
উহারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করিল এবং উহারা গোপনে পরামর্শ করিল। (২০:৬২)
উহারা বলিল, ‘এই দুইজন অবশ্যই জাদুকর, তাহারা চাহে তাহাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হইতে বহিষ্কার করিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন-ব্যবস্থা ধ্বংস করিতে। (২০:৬৩)
‘অতএব তোমরা তোমাদের জাদুক্রিয়া সংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হইয়া উপস্থিত হও এবং যে আজ জয়ী হইবে সে-ই সফল হইবে।’ (২০:৬৪)
উহারা বলিল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।’ (২০:৬৫)
মূসা বলিল, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর।’ উহাদের জাদু-প্রভাবে অকস্মাৎ মূসার মনে হইল উহাদের দড়ি ও লাঠিগুলি ছুটাছুটি করিতেছে। (২০:৬৬)
মূসা তাহার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করিল। (২০:৬৭)
আমি বলিলাম, ‘ভয় করিও না, তুমিই প্রবল।’ (২০:৬৮)
‘তোমার দক্ষিণ হস্তে যাহা আছে তাহা নিক্ষেপ কর, ইহা উহারা যাহা করিয়াছে তাহা গ্রাস করিয়া ফেলিবে। উহারা যাহা করিয়াছে তাহা তো কেবল জাদুকরের কৌশল। জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হইবে না।’ (২০:৬৯)
অতঃপর জাদুকরেরা সিজ্দাবনত হইল ও বলিল, ‘আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনিলাম।’ (২০:৭০)
ফির‘আওন বলিল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা মূসাতে বিশ্বাস স্থাপন করিলে! দেখিতেছি, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়াছে। সুতরাং আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হইতে কর্তন করিবই এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করিবই এবং তোমরা অবশ্যই জানিতে পারিবে আমাদের মধ্যে কাহার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’ (২০:৭১)
তাহারা বলিল, ‘আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন আসিয়াছে তাহার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যাহা তুমি করিতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করিতে পার।’ (২০:৭২)
‘আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনিয়াছি যাহাতে তিনি ক্ষমা করেন আমাদের অপরাধ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করিতে বাধ্য করিয়াছ তাহা। আর আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’ (২০:৭৩)
যে তাহার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হইয়া উপস্থিত হইবে তাহার জন্য তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরিবেও না, বাঁচিবেও না। (২০:৭৪)
এবং যাহারা তাঁহার নিকট উপস্থিত হইবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করিয়া, তাহাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা- (২০:৭৫)
স্থায়ী জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং এই পুরস্কার তাহাদেরই, যাহারা পবিত্র। (২০:৭৬)
আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করিয়াছিলাম এই মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে লইয়া রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাহাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়া এক শুষ্ক পথ নির্মাণ কর। পশ্চাৎ হইতে আসিয়া তোমাকে ধরিয়া ফেলা হইবে-এই আশংকা করিও না এবং ভয়ও করিও না। (২০:৭৭)
অতঃপর ফির‘আওন তাহার সৈন্যবাহিনীসহ তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল, অতঃপর সমুদ্র উহাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করিল। (২০:৭৮)
আর ফির‘আওন তাহার সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্ট করিয়ছিল এবং সৎপথ দেখায় নাই। (২০:৭৯)
হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু হইতে উদ্ধার করিয়াছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সাল্ওয়া প্রেরণ করিয়াছিলাম, (২০:৮০)
তোমাদেরকে যাহা দান করিয়াছি তাহা হইতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমালংঘন করিও না, করিলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যাহার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হইয়া যায়। (২০:৮১)
এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তাহার প্রতি, যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে। (২০:৮২)
হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলিয়া তোমাকে ত্বরা করিতে বাধ্য করিল কিসে? (২০:৮৩)
সে বলিল, ‘এই তো উহারা আমার পশ্চাতে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি ত্বরায় তোমার নিকট আসিলাম, তুমি সন্তুষ্ট হইবে এইজন্য।’ (২০:৮৪)
তিনি বলিলেন, ‘আমি তো তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলিয়াছি তোমার চলিয়া আসার পর এবং সামিরী উহাদেরকে পথভ্রষ্ট করিয়াছে।’ (২০:৮৫)
অতঃপর মূসা তাহার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরিয়া গেল ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হইয়া। সে বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেন নাই? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হইয়াছে, না তোমরা চাহিয়াছ তোমাদের প্রতি আপতিত হউক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করিলে?’ (২০:৮৬)
উহারা বলিল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করি নাই; তবে আমাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা উহা অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে। (২০:৮৭)
‘অতঃপর সে উহাদের জন্য গড়িল এক গো-বৎস, এক অবয়ব, যাহা হাম্বা রব করিত।’ উহারা বলিল, ‘ইহা তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্, কিন্তু মূসা ভুলিয়া গিয়াছে।’ (২০:৮৮)
তবে কি উহারা ভাবিয়া দেখে না যে, উহা তাহাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাহাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করিবার ক্ষমতা রাখে না? (২০:৮৯)
হারূন উহাদেরকে পূর্বেই বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! ইহা দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হইয়াছে। তোমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়; সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মানিয়া চল।’ (২০:৯০)
উহারা বলিয়াছিল, ‘আমাদের নিকট মূসা ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত আমরা ইহার পূজা হইতে কিছুতেই বিরত হইব না।’ (২০:৯১)
মূসা বলিল, ‘হে হারূন! তুমি যখন দেখিলে উহারা পথভ্রষ্ট হইয়াছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করিল- (২০:৯২)
‘আমার অনুসরণ করা হইতে? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করিলে?’ (২০:৯৩)
হারূন বলিল, ‘হে আমার সহোদর! আমার শ্মশ্রু ও কেশ ধরিও না। আমি আশংকা করিয়াছিলাম যে, তুমি বলিবে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হও নাই।’ (২০:৯৪)
মূসা বলিল, ‘হে সামিরী! তোমার ব্যাপার কী?’ (২০:৯৫)
সে বলিল, ‘আমি দেখিয়াছিলাম যাহা উহারা দেখে নাই, অতঃপর আমি সেই দূতের পদচিহ্ন হইতে একমুষ্টি লইয়াছিলাম এবং আমি উহা নিক্ষেপ করিয়াছিলাম; আমার মন আমার জন্য শোভন করিয়াছিল এইরূপ করা।’ (২০:৯৬)
মূসা বলিল, ‘দূর হও; তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য ইহাই রহিল যে, তুমি বলিবে, ‘আমি অস্পৃশ্য’, এবং তোমার জন্য রহিল এক নির্দিষ্ট কাল, তোমার বেলায় যাহার ব্যতিক্রম হইবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যাহার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা উহাকে জ্বালাইয়া দিবই, অতঃপর উহাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া সাগরে নিক্ষেপ করিবই।’ (২০:৯৭)
স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘তুমি জালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও, (২৬:১০)
‘ফির‘আওনের সম্প্রদায়ের নিকট; উহারা কি ভয় করে না?’ (২৬:১১)
তখন সে বলিয়াছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আশংকা করি যে, উহারা আমাকে অস্বীকার করিবে, (২৬:১২)
‘এবং আমার হৃদয় সংকুচিত হইয়া পড়িতেছে, আর আমার জিহ্বা তো সাবলীল নাই! সুতরাং হারূনের প্রতিও প্রত্যাদেশ পাঠাও। (২৬:১৩)
‘আমার বিরুদ্ধে তো উহাদের এক অভিযোগ আছে, আমি আশংকা করি উহারা আমাকে হত্যা করিবে।’ (২৬:১৪)
আল্লাহ্ বলিলেন, ‘না, কখনই নহে, অতএব তোমরা উভয়ে আমার নিদর্শনসহ যাও, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, শ্রবণকারী। (২৬:১৫)
‘অতএব তোমরা উভয়ে ফির‘আওনের নিকট যাও এবং বল, ‘আমরা তো জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল, (২৬:১৬)
‘আমাদের সঙ্গে যাইতে দাও বনী ইসরাঈলকে।’ (২৬:১৭)
ফির‘আওন বলিল, ‘আমরা কি তোমাকে শৈশবে আমাদের মধ্যে লালন-পালন করি নাই? আর তুমি তো তোমার জীবনের বহু বৎসর আমাদের মধ্যে কাটাইয়াছ, (২৬:১৮)
‘এবং তুমি তোমার কর্ম যাহা করিবার তাহা তো করিয়াছ; তুমি অকৃতজ্ঞ।’ (২৬:১৯)
মূসা বলিল, ‘আমি তো ইহা করিয়াছিলাম তখন, যখন ছিলাম অনবধান। (২৬:২০)
‘অতঃপর আমি যখন তোমাদের ভয়ে ভীত হইলাম তখন আমি তোমাদের নিকট হইতে পলাইয়া গিয়াছিলাম। তৎপর আমার প্রতিপালক আমাকে জ্ঞান দান করিয়াছেন এবং আমাকে রাসূল করিয়াছেন। (২৬:২১)
‘আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করিতেছ, তাহা তো এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করিয়াছ।’ (২৬:২২)
ফির‘আওন বলিল, ‘জগতসমূহের প্রতিপালক আবার কী?’ (২৬:২৩)
মূসা বলিল, ‘তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।’ (২৬:২৪)
ফির‘আওন তাহার পারিষদবর্গকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, ‘তোমরা শুনিতেছ তো!’ (২৬:২৫)
মূসা বলিল, ‘তিনি তোমদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষগণেরও প্রতিপালক।’ (২৬:২৬)
ফির‘আওন বলিল, ‘তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের রাসূল তো নিশ্চয়ই পাগল।’ (২৬:২৭)
মূসা বলিল, ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং উহাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক; যদি তোমরা বুঝিতে!’ (২৬:২৮)
ফির‘আওন বলিল, ‘তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে ইলাহ্রূপে গ্রহণ কর আমি তোমাকে অবশ্যই কারারুদ্ধ করিব।’ (২৬:২৯)
মূসা বলিল, ‘আমি যদি তোমার নিকট কোন স্পষ্ট নিদর্শন আনয়ন করি, তবুও?’ (২৬:৩০)
ফির‘আওন বলিল, ‘তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে উহা উপস্থিত কর।’ (২৬:৩১)
অতঃপর মূসা তাহার লাঠি নিক্ষেপ করিলে তৎক্ষণাৎ উহা এক সাক্ষাৎ অজগর হইল। (২৬:৩২)
এবং মূসা হাত বাহির করিল আর তৎক্ষণাৎ উহা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল প্রতিভাত হইল। (২৬:৩৩)
ফির‘আওন তাহার পারিষদবর্গকে বলিল, ‘এ তো এক সুদক্ষ জাদুকর! (২৬:৩৪)
‘এ তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হইতে তাহার জাদুবলে বহিষ্কার করিতে চায়। এখন তোমরা কী করিতে বল?’ (২৬:৩৫)
উহারা বলিল, ‘তাহাকে ও তাহার ভ্রাতাকে কিছু অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সংগ্রাহকদেরকে পাঠাও, (২৬:৩৬)
‘যেন তাহারা তোমার নিকট প্রতিটি অভিজ্ঞ জাদুকর উপস্থিত করে।’ (২৬:৩৭)
অতঃপর এক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে জাদুকরদেরকে একত্র করা হইল, (২৬:৩৮)
এবং লোকদেরকে বলা হইল, ‘তোমরাও সমবেত হইতেছ কি? (২৬:৩৯)
‘যেন আমরা জাদুকরদের অনুসরণ করিতে পারি, যদি উহারা বিজয়ী হয়।’ (২৬:৪০)
অতঃপর জাদুকরেরা আসিয়া ফিরা‘আওনকে বলিল, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই আমাদের জন্য পুরস্কার থাকিবে তো? (২৬:৪১)
ফিরা‘আওন বলিল, ‘হ্যাঁ, তখন তোমরা অবশ্যই আমার ঘনিষ্ঠদের শামিল হইবে।’ (২৬:৪২)
মূসা উহাদেরকে বলিল, ‘তোমাদের যাহা নিক্ষেপ করিবার তাহা নিক্ষেপ কর।’ (২৬:৪৩)
অতঃপর উহারা উহাদের রজ্জু ও লাঠি নিক্ষেপ করিল এবং উহারা বলিল, ‘ফিল‘আওনের ইয্যতের শপথ! আমরাই বিজয়ী হইব।’ (২৬:৪৪)
অতঃপর মূসা তাহার লাঠি নিক্ষেপ করিল, সহসা উহা উহাদের অলীক সৃষ্টিগুলিকে গ্রাস করিতে লাগিল। (২৬:৪৫)
তখন জাদুকরেরা সিজ্দাবনত হইয়া পড়িল। (২৬:৪৬)
এবং বলিল, ‘আমরা ঈমান আনয়ন করিলাম জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি- (২৬:৪৭)
‘যিনি মূসা ও হারূনেরও প্রতিপালক।’ (২৬:৪৮)
ফির‘আওন বলিল, ‘কী! আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা উহাতে বিশ্বাস করিলে? সে-ই তো তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়াছে। শীঘ্রই তোমরা ইহার পরিণাম জানিবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত এবং তোমাদের পা বিপরীত দিক হইতে কর্তন করিব এবং তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করিবই।’ (২৬:৪৯)
উহারা বলিল, ‘কোন ক্ষতি নাই, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকটই প্রত্যাবর্তন করিব। (২৬:৫০)
‘আমরা তো আশা করি, আমাদের প্রতিপালক আমাদের অপরাধ মার্জনা করিবেন, কারণ আমরা মু’মিনদের মধ্যে অগ্রণী।’ (২৬:৫১)
আমি মূসার প্রতি ওহী করিয়াছিলাম এই মর্মে: ‘আমার বান্দাদেরকে লইয়া রাত্রিকালে বাহির হও, তোমাদের তো পশ্চাদ্ধাবন করা হইবে।’ (২৬:৫২)
অতঃপর ফির‘আওন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠাইল, (২৬:৫৩)
এই বলিয়া, ‘ইহারা তো ক্ষুদ্র একটি দল (২৬:৫৪)
এবং ‘উহারা তো আমাদের ক্রোধ উদ্রেক করিয়াছে; (২৬:৫৫)
এবং আমরা তো সকলেই সদাশংকিত।’ (২৬:৫৬)
পরিণামে আমি ফির‘আওন গোষ্ঠীকে বহিষ্কার করিলাম উহাদের উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণ হইতে (২৬:৫৭)
এবং ধনভান্ডার ও সুরম্য সৌধমালা হইতে। (২৬:৫৮)
এইরূপই ঘটিয়াছিল এবং বনী ইসরাঈলকে করিয়াছিলাম এই সমুদয়ের অধিকারী। (২৬:৫৯)
উহারা সূর্যোদয়কালে তাহাদের পশ্চাতে আসিয়া পড়িল। (২৬:৬০)
অতঃপর যখন দুই দল পরস্পরকে দেখিল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলিল, ‘আমরা তো ধরা পড়িয়া গেলাম।’ (২৬:৬১)
মূসা বলিল, ‘কখনই নহে! আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করিবেন।’ (২৬:৬২)
অতঃপর মূসার প্রতি ওহী করিলাম, ‘তোমার যষ্টি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে উহা বিভক্ত হইয়া প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হইয়া গেল; (২৬:৬৩)
আমি সেখানে উপনীত করিলাম অপর দলটিকে, (২৬:৬৪)
এবং আমি উদ্ধার করিলাম মূসা ও তাহার সঙ্গী সকলকে, (২৬:৬৫)
তৎপর নিমজ্জিত করিলাম অপর দলটিকে। (২৬:৬৬)
স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন মূসা তাহার পরিবারবর্গকে বলিয়াছিল, ‘আমি আগুন দেখিয়াছি, সত্বর আমি সেখান হইতে তোমাদের জন্য কোন খবর আনিব অথবা তোমাদের জন্য আনিব জ্বলন্ত অঙ্গার, যাহারা তোমরা আগুন পোহাইতে পার। (২৭:৭)
অতঃপর সে যখন উহার নিকট আসিল, তখন ঘোষিত হইল ‘ধন্য, যাহারা আছে এই আলোর মধ্যে এবং যাহারা আছে ইহার চতুষ্পার্শ্বে, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ পবিত্র ও মহিমান্বিত। (২৭:৮)
‘হে মূসা! আমি তো আল্লাহ্, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, (২৭:৯)
‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন সে উহাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করিতে দেখিল তখন সে পিছনের দিকে ছুটিতে লাগিল এবং ফিরিয়াও তাকাইল না। বলা হইল, ‘হে মূসা! ভীত হইও না, নিশ্চয়ই আমি এমন, আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না; (২৭:১০)
‘তবে যাহারা জুলুম করিবার পর মন্দ কর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে, তাহাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২৭:১১)
‘এবং তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে শুভ্র নির্মল অবস্থায়। ইহা ফির‘আওন ও তাহার সম্প্রদায়ের নিকট আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্তর্গত। উহারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।’ (২৭:১২)
অতঃপর যখন উহাদের নিকট আমার স্পষ্ট নিদর্শন আসিল, উহারা বলিল, ‘ইহা সুস্পষ্ট জাদু।’ (২৭:১৩)
উহারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলি প্রত্যাখ্যান করিল, যদিও উহাদের অন্তর এইগুলিকে সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিল। দেখ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হইয়াছিল! (২৭:১৪)
তা-সীন-মীম; (২৮:১)
এই আয়াতগুলি সুষ্পষ্ট কিতাবের। (২৮:২)
আমি তোমার নিকট মূসা ও ফির‘আওনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করিতেছি, মু’মিন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে। (২৮:৩)
ফির‘আওন দেশে পরাক্রমশালী হইয়াছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া উহাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করিয়াছিল; উহাদের পুত্রগণকে সে হত্যা করিত এবং নারীগণকে জীবিত থাকিত দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (২৮:৪)
আমি ইচ্ছা করিলাম, সে দেশে যাহাদেরকে হীনবল করা হইয়াছিল, তাহাদের প্রতি অনুগ্রহ করিতে, তাহাদেরকে নেতৃত্ব দান করিতে ও উত্তরাধিকারী করিতে; (২৮:৫)
এবং তাহাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করিতে, আর ফির‘আওন, হামান ও তাহাদের বাহিনীকে তাহা দেখাইয়া দিতে, যাহা উহাদের নিকট তাহারা আশংকা করিত। (২৮:৬)
মূসা-জননীর অন্তরে আমি ইঙ্গিতে নির্দেশ করিলাম, ‘শিশুটিকে স্তন্য দান করিতে থাক। যখন তুমি তাহার সম্পর্কে কোন আশংকা করিবে তখন ইহাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করিও এবং ভয় করিও না, দুঃখও করিও না। আমি অবশ্যই ইহাকে তোমার নিকট ফিরাইয়া দিব এবং ইহাকে রাসূলদের একজন করিব।’ (২৮:৭)
অতঃপর ফির‘আওনের লোকজন তাহাকে উঠাইয়া লইল। ইহার পরিণাম তো এই ছিল যে, সে উহাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হইবে। অবশ্যই ফির‘আওন, হামান ও উহাদের বাহিনী ছিল অপরাধী। (২৮:৮)
ফির‘আওনের স্ত্রী বলিল, ‘এই শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্রীতিকর। ইহাকে হত্যা করিও না, সে আমাদের উপকারে আসিতে পারে, আমরা তাহাকে সন্তান হিসাবেও গ্রহণ করিতে পারি।’ প্রকৃতপক্ষে উহারা ইহার পরিণাম বুঝিতে পারে নাই। (২৮:৯)
মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হইয়া পড়িয়াছিল। যাহাতে সে আস্থাশীল হয় তজ্জন্য আমি তাহার হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া না দিলে সে তাহার পরিচয় তো প্রকাশ করিয়াই দিত। (২৮:১০)
সে মূসার ভগ্নিকে বলিল, ‘ইহার পিছনে পিছনে যাও।’ সে উহাদের অজ্ঞাতসারে দূর হইতে তাহাকে দেখিতেছিল। (২৮:১১)
পূর্ব হইতেই আমি ধাত্রী-স্তন্যপানে তাহাকে বিরত রাখিয়াছিলাম। মূসার ভগ্নি বলিল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন এক পরিবারের সন্ধান দিব যাহারা তোমাদের হইয়া ইহাকে লালন-পালন করিবে এবং ইহার মঙ্গলকামী হইবে?’ (২৮:১২)
অতঃপর আমি তাহাকে ফিরাইয়া দিলাম তাহার জননীর নিকট যাহাতে তাহার চক্ষু জুড়ায়, সে দুঃখ না করে এবং বুঝিতে পারে যে, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ইহা জানে না। (২৮:১৩)
যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হইল তখন আমি তাহাকে হিক্মত ও জ্ঞান দান করিলাম; এইভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কার প্রদান করিয়া থাকি। (২৮:১৪)
সে নগরীতে প্রবেশ করিল, যখন ইহার অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখিল, একজন তাহার নিজ দলের এবং অপর জন তাহার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি উহার শত্রুর বিরুদ্ধে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মূসা উহাকে ঘুষি মারিল; এইভাবে সে তাহাকে হত্যা করিয়া বসিল। মূসা বলিল, ‘ইহা শয়তানের কান্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’ (২৮:১৫)
সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি জুলুম করিয়াছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।’ অতঃপর তিনি তাহাকে ক্ষমা করিলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (২৮:১৬)
সে আরও বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আামার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছ, আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হইব না।’ (২৮:১৭)
অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সেই নগরীতে তাহার প্রভাত হইল। হঠাৎ সে শুনিতে পাইল পূর্বদিন যে ব্যক্তি তাহার সাহায্য চাহিয়াছিল, সে তাহার সাহায্যের জন্য চিৎকার করিতেছে। মূসা তাহাকে বলিল, ‘তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি। (২৮:১৮)
অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরিতে উদ্যত হইল, তখন সে ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করিতে চাহিতেছ? তুমি তো পৃথিবীর স্বেচ্ছাচারী হইতে চাহিতেছ, শান্তি স্থাপনকারী হইতে চাও না।’ (২৮:১৯)
নগরীর দূর প্রান্ত হইতে এক ব্যক্তি ছুটিয়া আসিল ও বলিল, ‘হে মূসা! পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করিবার পরামর্শ করিতেছে। সুতরাং তুমি বাহিরে চলিয়া যাও, আমি তো তোমার মঙ্গলকামী।’ (২৮:২০)
ভীত সতর্ক অবস্থায় সে সেখান হইতে বাহির হইয়া পড়িল এবং বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি জালিম সম্প্রদায় হইতে আমাকে রক্ষা কর।’ (২৮:২১)
যখন মূসা মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করিল তখন বলিল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করিবেন।’ (২৮:২২)
যখন সে মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছিল, দেখিল, একদল লোক তাহাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতেছে এবং উহাদের পশ্চাতে দুইজন নারী তাহাদের পশুগুলিকে আগলাইতেছে। মূসা বলিল, ‘তোমাদের কী ব্যাপার?’ উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা উহাদের জানোয়ারগুলিকে লইয়া সরিয়া না যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ।’ (২৮:২৩)
মূসা তখন উহাদের পক্ষে জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইল। তৎপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করিবে আমি তো তাহার কাঙ্গাল।’ (২৮:২৪)
তখন নারীদ্বয়ের একজন শরম-জড়িত চরণে তাহার নিকট আসিল এবং বলিল, ‘আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করিতেছেন, আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইবার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য।’ অতঃপর মূসা তাহার নিকট আসিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করিলে সে বলিল, ‘ভয় করিও না, তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল হইতে বাঁচিয়া গিয়াছ।’ (২৮:২৫)
উহাদের একজন বলিল, ‘হে পিতা! তুমি ইহাকে মজুর নিযুক্ত কর, কারণ তোমার মজুর হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (২৮:২৬)
সে মূসাকে বলিল, ‘আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই, এই শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করিবে, যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তুমি আমাকে সদাচারী পাইবে।’ (২৮:২৭)
মূসা বলিল, ‘আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তিই রহিল। এই দুইটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করিলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকিবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলিতেছি আল্লাহ্ তাহার সাক্ষী।’ (২৮:২৮)
মূসা যখন তাহার মেয়াদ পূর্ণ করিবার পর সপরিবারে যাত্রা করিল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখিতে পাইল। সে তাহার পরিজনবর্গকে বলিল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখিয়াছি, সম্ভবত আমি সেখান হইতে তোমাদের জন্য খবর আনিতে পারি অথবা একখন্ড জ্বলন্ত কাঠ আনিতে পারি যাহাতে তোমরা আগুন পোহাইতে পার।’ (২৮:২৯)
যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছিল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভূমিস্থিত এক বৃক্ষের দিক হইতে তাহাকে আহ্বান করিয়া বলা হইল, ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ্, জগতসমূহের প্রতিপালক;’ (২৮:৩০)
আরও বলা হইল, ‘তুমি তোমার যষ্টি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর, যখন সে উহাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করিতে দেখিল তখন পিছনের দিকে ছুটিতে লাগিল এবং ফিরিয়া তাকাইল না। তাহাকে বলা হইল, ‘হে মূসা! সম্মুখে আইস, ভয় করিও না; তুমি তো নিরাপদ। (২৮:৩১)
‘তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে শুভ্র-সমুজ্জ্বল নির্দোষ হইয়া। ভয় দূর করিবার জন্য তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চাপিয়া ধর। এই দুইটি তোমার প্রতিপালক-প্রদত্ত প্রমাণ, ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের জন্য। উহারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (২৮:৩২)
মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো উহাদের একজনকে হত্যা করিয়াছি। ফলে আমি আশংকা করিতেছি উহারা আমাকে হত্যা করিবে। (২৮:৩৩)
‘আমার ভ্রাতা হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী; অতএব তাহাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করিবে। আমি আশংকা করি উহারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিবে।’ (২৮:৩৪)
আল্লাহ্ বলিলেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করিব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করিব। উহারা তোমাদের নিকট পৌঁছিতে পারিবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নির্দশবলে উহাদের উপর প্রবল হইবে।’ (২৮:৩৫)
মূসা যখন উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলি লইয়া আসিল, উহারা বলিল, ‘ইহা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষগণের কালে কখনও এইরূপ কথা শুনি নাই।’ (২৮:৩৬)
মূসা বলিল, ‘আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁহার নিকট হইতে পথনির্দেশ আনিয়াছে এবং আখিরাতে কাহার পরিণাম শুভ হইবে। জালিমরা কখনো সফলকাম হইবে না।’ (২৮:৩৭)
ফির‘আওন বলিল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ আছে বলিয়া জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈয়ার কর; হয়ত আমি ইহাতে উঠিয়া মূসার ইলাহ্কে দেখিতে পারি। তবে আমি অবশ্যই মনে করি সে মিথ্যাবাদী।’ (২৮:৩৮)
ফির‘আওন ও তাহার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করিয়াছিল এবং উহারা মনে করিয়াছিল যে, উহারা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে না। (২৮:৩৯)
অতএব আমি তাহাকে ও তাহার বাহিনীকে ধরিলাম এবং তাহাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলাম। দেখ, জালিমদের পরিণাম কি হইয়া থাকে। (২৮:৪০)
উহাদেরকে আমি নেতা করিয়াছিলাম; উহারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করিত; কিয়ামতের দিন উহাদেরকে সাহায্য করা হইবে না। (২৮:৪১)
এই পৃথিবীতে আমি উহাদের পশ্চাতে লাগাইয়া দিয়াছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন উহারা হইবে ঘৃণিত। (২৮:৪২)
আমি তো পূর্ববর্তী বহু মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিবার পর মূসাকে দিয়াছিলাম কিতাব, মানবজাতির জন্য জ্ঞানবর্তিকা, পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ, যাহাতে উহারা উপদেশ গ্রহণ করে। (২৮:৪৩)
মূসাকে যখন আমি বিধান দিয়াছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না। (২৮:৪৪)
আমি আমার নিদর্শন ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করিয়াছিলাম, (৪০:২৩)
ফির‘আওন, হামান ও কারূনের নিকট কিন্তু উহারা বলিয়াছিল, ‘এই লোকটা তো এক জাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী।’ (৪০:২৪)
অতঃপর মূসা আমার নিকট হইতে সত্য লইয়া উহাদের নিকট উপস্থিত হইলে উহারা বলিল, ‘মূসার সঙ্গে যাহারা ঈমান আনিয়াছে, তাহাদের পুত্র-সন্তাদেরকে হত্যা কর এবং তাহাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ।’ কিন্তু কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হইবেই। (৪০:২৫)
ফির‘আওন বলিল, ‘আমাকে ছাড়িয়া দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তাহার প্রতিপালকের পরণাপন্ন হউক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দীনের পরিবর্তন ঘটাইবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে।’ (৪০:২৬)
মূসা বলিল, ‘যাহারা বিচার দিবসে বিশ্বাস করে না, সেই সকল উদ্ধত ব্যক্তি হইতে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হইয়াছি।’ (৪০:২৭)
মূসাকে তো আমি আমার নিদর্শনসহ ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, ‘আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত।’ (৪৩:৪৬)
সে উহাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসিবামাত্র উহারা তাহা লইয়া হাসি-ঠাট্টা করিতে লাগিল। (৪৩:৪৭)
আমি উহাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাই নাই যাহা উহার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম যাহাতে উহারা প্রত্যাবর্তন করে। (৪৩:৪৮)
উহারা বলিয়াছিল, হে জাদুকর! তোমার প্রতিপালকের নিকট তুমি আমাদের জন্য তাহা প্রার্থনা কর যাহা তিনি তোমার সঙ্গে অঙ্গীকার করিয়াছেন, তাহা হইলে আমরা অবশ্যই সৎপথ অবলম্বন করিব।’ (৪৩:৪৯)
অতঃপর যখন আমি উহাদের হইতে শাস্তি বিদূরিত করিলাম তখনই উহারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়া বসিল। (৪৩:৫০)
ফির‘আওন তাহার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলিয়া ঘোষণা করিল, হে আমার সম্প্রদায়! মিসর রাজ্য কি আমার নয়? আর এই নদীগুলি আমার পাদদেশে প্রবাহিত; তোমরা ইহা দেখ না? (৪৩:৫১)
‘আমি তো শ্রেষ্ঠ এই ব্যক্তি হইতে, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলিতেও অক্ষম! (৪৩:৫২)
‘মূসাকে কেন দেওয়া হইল না স্বর্ণ-বলয় অথবা তাহার সঙ্গে কেন আসিল না ফিরিশ্তাগণ দলবদ্ধভাবে?’ (৪৩:৫৩)
এইভাবে সে তাহার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধি করিয়া দিল, ফলে উহারা তাহার কথা মানিয়া লইল। উহারা তো ছিল এক সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (৪৩:৫৪)
যখন উহারা আমাকে ক্রোধান্বিত করিল আমি উহাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করিলাম উহাদের সকলকে। (৪৩:৫৫)
ইহাদের পূর্বে আমি তো ফির‘আওন সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করিয়াছিলাম এবং উহাদের নিকটও আসিয়াছিল এক সম্মানিত রাসূল, (৪৪:১৭)
সে বলিল, ‘আল্লাহ্র বান্দাদেরকে আমার নিকট প্রত্যর্পণ কর। আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। (৪৪:১৮)
‘এবং তোমরা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিও না, আমি তোমাদের নিকট উপস্থিত করিতেছি স্পষ্ট প্রমাণ। (৪৪:১৯)
‘তোমরা যাহাতে আমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করিতে না পার, তজ্জন্য আমি আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণ লইতেছি। (৪৪:২০)
‘যদি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না কর, তবে তোমরা আমার নিকট হইতে দূরে থাক।’ (৪৪:২১)
অতঃপর মূসা তাহার প্রতিপালকের নিকট নিবেদন করিল, ‘ইহারা তো এক অপরাধী সম্প্রদায়।’ (৪৪:২২)
আমি বলিয়াছিলাম, ‘তুমি আমার বান্দাদেরকে লইয়া রজনীযোগে বাহির হইয়া পড়, তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হইবেই।’ (৪৪:২৩)
সমুদ্রকে স্থির থাকিতে দাও, উহারা এমন এক বাহিনী যাহা নিমজ্জিত হইবেই। (৪৪:২৪)
উহারা পশ্চাতে রাখিয়া গিয়াছিল কত উদ্যান ও প্রস্রবণ; (৪৪:২৫)
কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য প্রাসাদ, (৪৪:২৬)
কত বিলাস-উপকরণ, উহাতে তাহারা আনন্দ পাইত! (৪৪:২৭)
এবং নিদর্শন রাখিয়াছি মূসার বৃত্তান্তে, যখন আমি তাহাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফির‘আওনের নিকট প্রেরণ করিয়া-ছিলাম, (৫১:৩৮)
তখন সে ক্ষমতার দম্ভে মুখ ফিরাইয়া লইল এবং বলিল, ‘এই ব্যক্তি হয় এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ। (৫১:৩৯)
সুতরাং আমি তাহাকে ও তাহার দলবলকে শাস্তি দিলাম এবং উহাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলাম, সে তো ছিল তিরস্কারযোগ্য। (৫১:৪০)
তোমার নিকট মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছিয়াছে কি? (৭৯:১৫)
যখন তাহার প্রতিপালক পবিত্র উপত্যকা তুওয়া-য় তাহাকে আহ্বান করিয়া বলিয়াছিলেন, (৭৯:১৬)
‘ফির‘আওনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করিয়াছে,’ (৭৯:১৭)
এবং বল, ‘তোমার কি আগ্রহ আছে যে, তুমি পবিত্র হও- (৭৯:১৮)
‘আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথপ্রদর্শন করি যাহাতে তুমি তাঁহাকে ভয় কর?’ (৭৯:১৯)
অতঃপর সে উহাকে মহানিদর্শন দেখাইল। (৭৯:২০)
কিন্তু সে অস্বীকার করিল এবং অবাধ্য হইল। (৭৯:২১)
অতঃপর সে পশ্চাৎ ফিরিয়া প্রতিবিধানে সচেষ্ট হইল। (৭৯:২২)
সে সকলকে সমবেত করিল এবং উচ্চৈ:স্বরে ঘোষণা করিল, (৭৯:২৩)
আর বলিল, ‘আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।’ (৭৯:২৪)
অতঃপর আল্লাহ্ উহাকে আখিরাতে ও দুনিয়ায় কঠিন শাস্তিতে পাকড়াও করিলেন। (৭৯:২৫)
যে ভয় করে তাহার জন্য অবশ্যই ইহাতে শিক্ষা রহিয়াছে। (৭৯:২৬)