যখন মূসা মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করিল তখন বলিল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করিবেন।’ (২৮:২২)
যখন সে মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছিল, দেখিল, একদল লোক তাহাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতেছে এবং উহাদের পশ্চাতে দুইজন নারী তাহাদের পশুগুলিকে আগলাইতেছে। মূসা বলিল, ‘তোমাদের কী ব্যাপার?’ উহারা বলিল, ‘আমরা আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা উহাদের জানোয়ারগুলিকে লইয়া সরিয়া না যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ।’ (২৮:২৩)
মূসা তখন উহাদের পক্ষে জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইল। তৎপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করিবে আমি তো তাহার কাঙ্গাল।’ (২৮:২৪)
তখন নারীদ্বয়ের একজন শরম-জড়িত চরণে তাহার নিকট আসিল এবং বলিল, ‘আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করিতেছেন, আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাইবার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য।’ অতঃপর মূসা তাহার নিকট আসিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করিলে সে বলিল, ‘ভয় করিও না, তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল হইতে বাঁচিয়া গিয়াছ।’ (২৮:২৫)
উহাদের একজন বলিল, ‘হে পিতা! তুমি ইহাকে মজুর নিযুক্ত কর, কারণ তোমার মজুর হিসাবে উত্তম হইবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (২৮:২৬)
সে মূসাকে বলিল, ‘আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই, এই শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করিবে, যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তুমি আমাকে সদাচারী পাইবে।’ (২৮:২৭)
মূসা বলিল, ‘আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তিই রহিল। এই দুইটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করিলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকিবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলিতেছি আল্লাহ্ তাহার সাক্ষী।’ (২৮:২৮)
মূসা যখন তাহার মেয়াদ পূর্ণ করিবার পর সপরিবারে যাত্রা করিল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখিতে পাইল। সে তাহার পরিজনবর্গকে বলিল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখিয়াছি, সম্ভবত আমি সেখান হইতে তোমাদের জন্য খবর আনিতে পারি অথবা একখন্ড জ্বলন্ত কাঠ আনিতে পারি যাহাতে তোমরা আগুন পোহাইতে পার।’ (২৮:২৯)
যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছিল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভূমিস্থিত এক বৃক্ষের দিক হইতে তাহাকে আহ্বান করিয়া বলা হইল, ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ্, জগতসমূহের প্রতিপালক;’ (২৮:৩০)
আরও বলা হইল, ‘তুমি তোমার যষ্টি নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর, যখন সে উহাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করিতে দেখিল তখন পিছনের দিকে ছুটিতে লাগিল এবং ফিরিয়া তাকাইল না। তাহাকে বলা হইল, ‘হে মূসা! সম্মুখে আইস, ভয় করিও না; তুমি তো নিরাপদ। (২৮:৩১)
‘তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, ইহা বাহির হইয়া আসিবে শুভ্র-সমুজ্জ্বল নির্দোষ হইয়া। ভয় দূর করিবার জন্য তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চাপিয়া ধর। এই দুইটি তোমার প্রতিপালক-প্রদত্ত প্রমাণ, ফির‘আওন ও তাহার পারিষদবর্গের জন্য। উহারা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (২৮:৩২)
মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো উহাদের একজনকে হত্যা করিয়াছি। ফলে আমি আশংকা করিতেছি উহারা আমাকে হত্যা করিবে। (২৮:৩৩)
‘আমার ভ্রাতা হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী; অতএব তাহাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করিবে। আমি আশংকা করি উহারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিবে।’ (২৮:৩৪)
আল্লাহ্ বলিলেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করিব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করিব। উহারা তোমাদের নিকট পৌঁছিতে পারিবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নির্দশবলে উহাদের উপর প্রবল হইবে।’ (২৮:৩৫)
মূসা যখন উহাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলি লইয়া আসিল, উহারা বলিল, ‘ইহা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষগণের কালে কখনও এইরূপ কথা শুনি নাই।’ (২৮:৩৬)
মূসা বলিল, ‘আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁহার নিকট হইতে পথনির্দেশ আনিয়াছে এবং আখিরাতে কাহার পরিণাম শুভ হইবে। জালিমরা কখনো সফলকাম হইবে না।’ (২৮:৩৭)