আর আল্লাহ্ তো বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তাহাদের মধ্য হইতে বারোজন নেতা নিযুক্ত করিয়াছিলাম; আর আল্লাহ্ বলিয়াছিলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন ও তাহাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করিব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহার পরও কেহ কুফরী করিলে সে তো সরল পথ হারাইবে। (৫:১২)
তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাহাদেরকে লা‘নত করিয়াছি ও তাহাদের হৃদয় কঠিন করিয়াছি; তাহারা শব্দগুলির আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল উহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। তুমি সর্বদা উহাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিতে দেখিতে পাইবে, সুতরাং উহাদেরকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (৫:১৩)
যাহারা বলে, ‘আমরা খ্রিস্টান’, তাহাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম; কিন্তু তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল তাহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। সুতরাং আমি তাহাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরূক রাখিয়াছি; তাহারা যাহা করিত আল্লাহ্ তাহাদেরকে অচিরেই তাহা জানাইয়া দিবেন। (৫:১৪)
হে কিতাবীগণ! আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে, তোমরা কিতাবের যাহা গোপন করিতে সে উহার অনেক কিছু তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক কিছু উপেক্ষা করিয়া থাকে। আল্লাহ্র নিকট হইতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট আসিয়াছে। (৫:১৫)
যাহারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ করিতে চায়, ইহা দ্বারা তিনি তাহাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোর দিকে লইয়া যান এবং উহাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (৫:১৬)
যাহারা বলে, ‘মার্ইয়াম-তনয় মসীহ্ই আল্লাহ্’, তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই। বল, ‘আল্লাহ্ মার্ইয়াম-তনয় মসীহ্, তাঁহার মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে যদি ধ্বংস করিতে ইচ্ছা করেন তবে তাঁহাকে বাধা দিবার শক্তি কাহার আছে?’ আসমান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই। তিনি যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৫:১৭)
ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আস্মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে। (৫:১৮)
হে কিতাবীগণ! রাসূল প্রেরণে বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করিতেছে যাহাতে তোমরা বলিতে না পার, ‘কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আমাদের নিকট আসে নাই।’ এখন তো তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসিয়াছে। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৫:১৯)
স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হইতে নবী করিয়াছিলেন ও তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করিয়াছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাহাকেও যাহা তিনি দেন নাই তাহা তোমাদেরকে দিয়াছিলেন। (৫:২০)
‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করিও না; করিলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়িবে।’ (৫:২১)
তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রহিয়াছে এবং তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনই সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করিব না; তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির হইয়া গেলেই আমরা প্রবেশ করিব।’ (৫:২২)
যাহারা ভয় করিতেছিল তাহাদের মধ্যে দুইজন-যাহাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহারা বলিল, ‘তোমরা তাহাদের মুকাবিলা করিয়া দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, প্রবেশ করিলেই তোমরা জয়ী হইবে এবং তোমরা মু’মিন হইলে আল্লাহ্র উপরই নির্ভর কর।’ (৫:২৩)
তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! তাহারা যত দিন সেখানে থাকিবে তত দিন আমরা সেখানে প্রবেশ করিবই না; সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসিয়া থাকিব।’ (৫:২৪)
তাহাদের অনেককেই তুমি দেখিবে পাপে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর; তাহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহা নিকৃষ্ট। (৫:৬২)
রাব্বানীগণ ও পন্ডিতগণ কেন তাহাদেরকে পাপ কথা বলিতে ও অবৈধ ভক্ষণে নিষেধ করে না? ইহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহাও নিকৃষ্ট। (৫:৬৩)
ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহ্র হাত রুদ্ধ’; উহারাই রুদ্ধহস্ত এবং উহারা যাহা বলে তজ্জন্য উহারা অভিশপ্ত, বরং আল্লাহ্র উভয় হস্তই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে যাহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও কুফরী বৃদ্ধি করিবেই। তাহাদের মধ্যে আমি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করিয়াছি। যতবার তাহারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ্ উহা নির্বাপিত করেন এবং তাহারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করিয়া বেড়ায়; আল্লাহ্ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদেরকে ভালবাসেন না। (৫:৬৪)
কিতাবীগণ যদি ঈমান আনিত ও ভয় করিতে তাহা হইলে আমি তাহাদের দোষ অবশ্যই অপনোদন করিতাম এবং তাহাদেরকে সুখময় জান্নাতে দাখিল করিতাম। (৫:৬৫)